‘চলো বানাই উপহার’ শিখন অভিজ্ঞতায় আমরা একটি মজার কাজ করবো। আমরা আমাদের খুব কাছের মানুষের জন্য একটি উপহার বানাব। এই উপহারটি বানানোর জন্য আমাদের কাছের মানুষের পছন্দ-অপছন্দ আমাদের জানা দরকার। তাদের পছন্দ-অপছন্দ জেনে যদি আমরা উপহার বানাই, তাহলে আমরা তাদের জন্য সঠিক উপহারটি বানাতে পারব। আমাদের তৈরি করা উপহারটি হতে পারে ডিজিটাল উপহার, যেমন: ডিজিটাল কোনো ছবি বা তথ্য বা কোনো অডিও রেকর্ড, আবার হতে পারে নন-ডিজিটাল বা হাতে তৈরি উপহার। এর জন্য আমাদের প্রথমে উপহারের বিষয় ও ব্যক্তি/দল চিহ্নিত করতে হবে এবং সে অনুযায়ী তাদের পছন্দ মতো তাদের জন্য উপহার বানাতে হবে। চলো আমরা উপহার বানাই।
আমাদের গত সেশনের কাজটি নিশ্চয়ই আমাদের খুব ভালো লেগেছে। আমরা খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছি তথ্য কতটা প্রয়োজন আমাদের জীবনে এবং সঠিক তথ্য ব্যবহার করে আমরা কি দারুণ কাজ করে ফেলতে পারি। আমরা আমাদের জীবনের অনেক সমস্যাই সমাধান করে ফেলতে পারি সঠিক তথ্য সঠিক উৎস থেকে সংগ্রহ করে দায়িত্বশীলভাবে ব্যবহার করার মাধ্যমে। কিন্তু তথ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে আর একটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হয়। সেটি হলো আমি যাকে তথ্যটি দিচ্ছি, তিনি সে তথ্যটি সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারছেন কি না।
জুয়েলের এলাকায় একজন খুব বৃদ্ধ মানুষকে জুয়েল দেখে প্রতিদিন মানুষের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে। তিনি ওই সাহায্যের টাকা দিয়ে প্রতিদিন কিছু খাবার কিনে খান। জুয়েলেরও খুব ইচ্ছা হলো এই বৃদ্ধ মানুষটিকে সহায়তা করবে যেন প্রতিদিন তাঁকে মানুষের কাছে খাবারের জন্য হাত পাততে না হয়। জুয়েল তথ্যের বিভিন্ন উৎস ঘটল এবং একটি সঠিক উৎস থেকে দেখল যে জুয়েলের এলাকার পাশে একটি সহায়তাকেন্দ্র আছে যেখানে এ রকম বৃদ্ধ মানুষদের সহায়তা করা হয়।জুয়েল ঐ সহায়তাকেন্দ্রের ওয়েবসাইটে গেল এবং সেখান থেকে তাদের সাথে যোগাযন্ত্রের ঠিকানা সংগ্ৰহ করণ এবং তা প্রিন্ট করে বৃদ্ধ মানুষটির হাতে দিয়ে আসল। পরদিন জুয়েল দেখল বৃদ্ধ মানুষটি আবার মানুষের কাছে সাহায্য চাইছে। এবার জুয়েল মানুষটির কাছে গেল এবং জিজ্ঞেস করল কেন তিনি আবার মানুষের কাছে সহায়তা চাইছেন? তিনি বললেন, বাজান! তুমি তো আমারে একটা কাগজ দিয়া গেসিলা। কিন্তু, আমি তো পড়তে পারি না বাজান! |
তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম, যাকে যে তথ্যটি দেওয়া প্রয়োজন, তাকে তার মতো করে তথ্যটি না দিলে কোনো লাভ হবে না। এই বিষয়টি আমাদের উপহার বানানোর সময় দেয়াল রাখতে হবে।
উপহার। কী দারুণ ব্যাপার তাই না। উপহার পেতে এবং অন্যকে উপহার দিতে কার না ভালো লাগে। যখন কাউকে উপহার, দেওয়া হয়, উপহার পেয়ে তার মুখের হাসি দেখলে মনটা আনন্দে ভরে ওঠে। আর সেটা যদি হয় নিজের হাতে বানানো উপহার তাহলে তো কথাই নেই। দেখো পাশে একটি উপহারের ছবি দেয়া আছে। আমরাও এ রকম একটি উপহার বানাতে পারি অথবা হাতে তৈরি কোন উপহারও বানাতে পারি এবং যার জন্য উপহার বানালাম তাকে পাঠাতে পারি।
উপহার বানানোর জন্য কিছু বিষয় পর্যবেক্ষন করে ও শিখে যদি আমরা বানাই তাহলে উপহারটি অনেক বেশি সুন্দর হবে। তা না হলে আমাদের ওপরের গল্পের মতো হয়ে যাবে। আমরা যার জন্য উপহার বানালাম তারা হয়তো। উপহারটি পছন্দই হবেনা বা কোন কাজে লাগবেনা ঠিক উপরের গল্পের মত। আর এ জন্য আমাদের কিছু দক্ষতা অর্জন করতে হবে। প্রথমেই আমাদের আগের কাজের, অর্থাৎ সঠিক তথ্য ব্যবহার করে সচেতনতা তৈরির যে কাজটি আমরা করেছি, সেই সমস্যাটিকে নিয়ে আমরা এখন আবার কাজ করব। আমরা আগের সেশনের কাজ অর্থাৎ অন্যকে সচেতন করার যে কাজটি দলে করেছিলাম, সেই একই দলে বসে আলোচনার মাধ্যমে কেন এই সমস্যাটিকেই আমরা বেছে নিয়েছিলাম তা বের করতে হবে। দলের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে, একটু চিন্তা করে দেখি কেন আমরা সমস্যাটিকে বেছে নিয়েছিলাম? আমাদের বের করা কারণগুলো নিচের ঘরে লিখি।
এবার সমস্যা সমাধানের জন্য যে লেখা/ছবি ও উপকরণ ব্যবহার করেছিলাম, তা ভালো করে দেখার পালা। পরের পৃষ্ঠার ঘরটি ব্যবহার করে আমরা দলে সচেতনতার জন্য যে উপকরণটি ও উপকরণের ভেতরের লেখা ও ছবি বানিয়েছিলাম, তা দলের সদস্যরা মিলে আলোচনার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করতে পারি।
আমাদের আগের শিখন অভিজ্ঞতার সমস্যা ও সমস্যা সমাধানের জন্য তৈরি করা উপকরণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে। আমরা কিছু বিষয়ের ধারণা পেলাম। তা হলো, আমরা যা-ই করি না, কেন আমাদের কাজ করার জন্য একটি নির্ধারিত বিষয় থাকে এবং বিষয় অনুযায়ী আমরা আমাদের উপকরণ বানিয়ে থাকি। তবে এর মধ্যে আরও একটি ধারণা আছে তা আমরা উপহারটি বানাতে বানাতে জানব।
গত সেশনে আমরা আমাদের প্রথম শিখন অভিজ্ঞতার বিষয় ও উপকরণ বিশ্লেষণ করেছিলাম। দেখো! আগের সেশনে এই ঘরগুলো পূরণ করতে করতে আমরা কিন্তু কিছু বিষয়ের ধারণা পেয়ে যাচ্ছি। আমরা কি বলতে পারব আমরা কী কী বিষয়ের ধারণা পেলাম? আমাদের উত্তর নিচের ছকে লিখি।
ধারণা ……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………… ……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………… ……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………… ……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………… |
এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছি যে, কিছু দিন পর আমরা ও আমাদের সহপাঠীরা মিলে যে উপহারগুলো বানাচ্ছি, সেখানে একটি বিষয় থাকবে এবং কিছু ব্যক্তি বা দল থাকবে যাদের আমরা উপহারটি দেব। এই বিষয়কে বলা হয় প্রেক্ষাপট এবং যাদের জন্য উপহার বানাব তাদের বলা হয় টার্গেট গ্রুপ বা লক্ষ্য দল। এই দুটি কঠিন শ আমাদের মনে না রাখলেও চলবে। কিন্তু আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে যার জন্য আমরা উপহারটি বানাতে যাচ্ছি, সে যেন আমাদের উপহারটি দেখে খুশি হয় এবং বুঝতে পারে।
এখন চলো আমরা একটু প্রেক্ষাপট ও লক্ষ্য দল সম্পর্কে জেনে নেই। যেহেতু উপহার বানাতে আমাদের এ দুটি বিষয় খুব সাহায্য করবে, তাই আমাদের এ দুটি বিষয় সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত। আমরা একটি কাল্পনিক ঘটনা চিন্তা করি, ধরো মিতু ও তার কয়েকজন বন্ধু মিলে চিন্তা করল তাদের বিদ্যালয়ের প্রাশনটি অপরিষ্কার হয়ে আছে এবং মিতু ও তার বন্ধুরা সেটি পরিষ্কার করতে চায়। মিতুরা বন্ধুরা মিলে তাদের শ্রেণি শিক্ষককে তাদের আগ্রহের কথা জানালো। শিক্ষক জানালেন, এটি একটি বড় কাজ, তাই এটি সম্পন্ন করতে বড় একটি দলের প্রয়োজন হবে। মিতু ও তার বন্ধুরা চিন্তা করলো কাদের তারা সহজে রাজি করতে পারবে, যেন তাদের নিয়ে একসঙ্গে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজটি করতে পারা যায়। মিতু ও তার বন্ধুরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল মিতুর শ্রেণির সব শিক্ষার্থী মিতুর বন্ধু, তাই তাদের এই ভালো কাজে রাজি করানো বেশ সহজ হবে। এবার মিতু ভাবল, তাদের কীভাবে রাজি করানো যায়, মিতুদের মধ্যে একজন বলল চলো ক্লাস রুমে গিয়ে সবার উদ্দেশ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ভাষণ দিই।‘ আরেকজন বলল ‘না, চল স্যারকে বলি একটি নোটিশ বা বিজ্ঞপ্তি লিখতে, তাহলে সবাই কাজ করতে বাধ্য হবে।‘, আবার অন্যজন বলল, ‘না বাধ্য করা ঠিক হবে না, চল আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একটি নাটিকা করি এবং নাটিকা শেষে সবাই মিলে শপথ করি যে আমরা আমাদের বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করব, সব সময় যেন এটি পরিষ্কার থাকে, সে উদ্যোগ/ব্যবস্থা নেব’। |
অবস্থা বা প্রেক্ষাপট: মিতুদের বিদ্যালয়ের অপরিষ্কার প্রাধান উদ্দেশ্য: বিদ্যালয়ের প্রাক্ষণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে সবার অংশগ্রহণ লক্ষ্য দল বা ব্য: নিতুর শ্রেণির সকল শিক্ষার্থী কনটেন্ট: ‘ভাষা’, ‘নোটিশ বা বিজ্ঞপ্তি’, ‘নাটিকা’, ‘ |
কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী বা মানুষকে বিবেচনায় নিয়ে সেসব মানুষকে সচেন্তন করা, কোনো তথ্য অবহিত ফরা (জানানো), অনুপ্রাণিত করা, বিনোদন দেওয়া বা এই ধরনের অন্যান্য উদ্দেশ্যে যখন আমরা কোনো একটি কনটেন্ট তৈরি করি, তখন ওই নির্দিষ্ট মানুষ বা জনগোষ্ঠীই হলো আমাদের লক্ষ্য দল বা টার্নেট গুণ।
আমাদের আশপাশের অবস্থা, প্রয়োজনীয়তা বা উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভর করে আমাদের লক্ষ্য দল বা টাে গ্রুপ কে বা কারা হবে। যেমন, বিদ্যালয়ের বন্ধুরা মিলে বনভোজনে যাবে, আমরাও যেতে চাই, এর জন্য আমাদের পরিবারের অভিভাবকের সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন। তাহলে আমাদের প্রেক্ষাপট বা অবস্থা হলো বনভোজন’ উদ্দেশ্য হলো পরিবারের সম্মতি নিয়ে বনভোজনে যাওয়া’ আর আমাদের লক্ষ্য দল বা ব্যক্তি হলো আমাদের অভিভাবক”।
এবার আমরা একটি অনুশীলন করব নিজের ধারণা মূল্যায়নের জন্য।
আমরা মোবাইল ফোনে এসএমএস- এর মাধ্যমে খুব সুন্দর করে আপনজনদের বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা পাঠাব। |
এখানে প্রেক্ষাপট / বিষয় অবস্থা:…………………………………………..
এখানে লক্ষ্য দল ব্যক্তি:………………………………………………….
বিদ্যালয়ের বাথরুমের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে আমরা খুব অসন্তুষ্ট এবং আমাদের শ্রেণিশিক্ষক ও প্রধান শিক্ষককে যৌথভাবে অভিযোগটি জানাব। |
এখানে প্রেক্ষাপট/বিষয়/অবস্থাঃ ………………………………………………………..
এখানে লক্ষ্য দল/ব্যক্তিঃ ………………………………………………….
আমাদের দেওয়া উত্তরগুলো আমরা আমাদের বন্ধু বা সহপাঠীর সঙ্গে মিলিয়ে নিতে পারি। আমরা কাজটি ঠিকঠাক মতো করতে পারলে আমাদের নিজেদের নিজেকে অভিনন্দন জানানো উচিত। এখানে যে তারাটি নেওয়া আছে, তা আমরা পছন্দমতো রং দিয়ে রং করি এবং নিজেকে উপহার দিই।
গত সেশনে আমরা বুঝলাম যে কিছু করতে হলে আমাদের একটি বিষয় নির্ধারণ করতে হয় এবং সে বিষয় অনুযায়ী আমাদের নির্ধারিত ব্যক্তি বা লক্ষ্য দল থাকে। আবার একটি বিষয় নির্ধারণের আমরা বেশ কিছু লক্ষন দল পেতে পারি। যেমন আমরা যদি ঠিক করি আমাদের বিদ্যালয়ের ভেতরে কাউকে আমরা উপহার দেবো, তাহলে আমাদের ঠিক করতে হবে আমরা কাকে উপহার দেবো। হতে পারে আমরা দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদায় উপলক্ষে কোন উপহার দিতে পারি, আবার বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষককে তার ভালো কাজের জন্য আমাদের মনের কথা জানিয়ে আমরা আমাদের প্রধান শিক্ষককে একটি উপহার দিতে পারি। আমাদের বিদ্যালয় যারা পরিষ্কার করে বা দেখে শুনে রাখে তাদের আমরা কতটা ভালোবাসি তা জানানোর জন্য আমরা তাদের একটি উপহার দিতে পারি অথবা আমাদের কোনো বন্ধু সুস্থ হয়ে বিদ্যালয়ে ফেরত এসেছে, তাকে উপহার দিতে পারি। এবার চলো আমরা একটি বিষয় নির্ধারণ করি এবং বিষয় অনুযায়ী লক্ষ্য দল নির্ধারণ করি এবং কেন ওই ব্যক্তি বা লক্ষ্য দলকে উপহার দেবো তা নির্ধারণ করি। তবে উপহারটি সহজে দেওয়ার জন্য আমাদের নিজেদের বিদ্যালয়কে উপহার বাক্সের প্রেক্ষাপট হিসেবে নির্ধারণ করাই উত্তম। লক্ষ্য দল নির্ধারণ করার জন্য আমাদের দলে কাজ করতে হবে। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যক্তি বা দলের কথা চিন্তা করে আমরা আমাদের দলে লক্ষ্য দল নির্ধারণ করি এবং নিচের ঘরে আমাদের দলের নির্ধারণ করা লক্ষ্য দলের নাম লিখি। এবার আমরা কেন ওই লক্ষ্য দলকে উপহার দেবো তার কারণটি লিখি।
আমরা কেন আমাদের লক্ষ্যদলকে উপহারটি দিচ্ছি
|
এবার আমরা বিস্তারিত ধারণা পাব কোন ধরনের লক্ষ্য দলের জন্য কী ধরনের উপহার আমরা বানাতে পারি। আবার এই ধারণাও পার কীভাবে লক্ষ্য দল ও মাধ্যম ভেদে উপহারের ধরন ভিন্ন হয়।
ধরি, আমরা এমন একজন বন্ধুর জন্য উপহার বানাব যে বাংলা লেখা পড়তে পারে না এবং সে বিদেশে থাকে। তাহলে আমরা কি তাকে সুন্দর একটি চিঠি আর একটি বাংলা গল্পের বই দিতে পারবা বা দিলেও কি সে পড়তে পারবে? নিশ্চয়ই না। আমরা তার জন্য এমন কিছু বানাব যেটি সে পড়তে পারে অথবা শুনে বা দেখে বুঝতে পারে। আমরা আমাদের প্রিয় বাংলা গল্পের বইটি বা চিঠিটি পড়ে আমাদের পরিবারের সদস্যদের কারও মোবাইল ফোনে বা অন্য কোনো রেকর্ডারে রেকর্ড করব, তারপর সেই রেকর্ডটি আমার বন্ধুকে পাঠাব ই-মেইলে বা কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বা পেনড্রাইভে বা ডিভিডি তে রেকর্ড করে। আমাদের বন্ধু যখন সেই সুন্দর বই পড়ার রেকর্ডটি শুনবে, তখন আমাদের বন্ধুও সেই প্রিয় বইটি উপভোগ করবে, তাই না?
আবার যেহেতু আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয় সম্পর্কে জানছি, তাই উপহার তৈরিতে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারকে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। অর্থাৎ বিদ্যালয়ে যদি ডিজিটাল প্রযুক্তি থাকে, তাহলে অবশ্যই ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে উপহার বানাব। তবে যদি আমাদের বিদ্যালয়ে ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা না থাকে তাহলেও কোনো সমস্যা নেই। আমরা একইভাবে উপকরণ বানাতে পারি। তবে এটি ডিজিটাল भধ না হয়ে কাগজ-কালি-পেন্সিল বা অন্য কোনো মাধ্যমে হবে। আমাদের চিন্তার সুবিধার জন্য নিচে লক্ষ্য দল ভেদে কিছু উপহারের উদাহরণ দেওয়া হলো এবং কিছু আমরা সহপাঠীদের সঙ্গে নিয়ে কী ধরনের ডিজিটাল ও হাতেকলমে উপহার বানাতে পারি, তা নিয়ে আলোচনা করি ও খালি ঘরগুলো পুরণ করি।
লক্ষ্য দল | উপহারের ধারণা |
---|---|
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদায় জানিয়ে উপহার | নন-ডিজিটাল: বিদ্যালয়ের ব্যাজের অনুরূপ ব্যাজ বানিয়ে দেওয়া, বিদ্যালয়ের একটি ছবি এঁকে নেওয়া, দশম শ্রেণির সবার নাম লিখে একটি সুন্দর কার্ড দেওয়া ইত্যাদি। |
ডিজিটাল: কোন সুন্দর গান বানিয়ে বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোড করতে পারি। অথবা ল্যাপটপ বা স্মার্টফোন থাকলে তাতে একটির পর একটি ছবি সাজিয়ে তার মধ্যেও মনের কথা লিখে দিতে পারি। | |
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মতামত জানিয়ে উপহার | নন-ডিজিটাল: সবার মতামত/অনুভূতি একটি ডায়রিতে লিখে দেওয়া অথবা একটি বাক্সে চিরকুট সাজিয়ে উপহার দেওয়া |
ডিজিটাল: প্রত্যেকের পক্ষ থেকে মতামত জানিয়ে একটি ভিডিও বানিয়ে প্রধান শিক্ষককে দেওয়া | |
বিদ্যালয়ের একজন সহায়তাকারীকে ভালোবাসা প্রকাশ করে উপহার | নন-ডিজিটাল: ……………………………………………………………………………………………………………………………………… …………………………………………………………………………………………………………………………………… ডিজিটাল: …………………………………………………………………………………………………………………………………… …………………………………………………………………………………………………………………………………… |
শ্রেণির কোনো বন্ধুকে সুস্থতা লাভ করায় কোনো উপহার | নন-ডিজিটাল: …………………………………………………………………………………………………………………………………… …………………………………………………………………………………………………………………………………… ডিজিটালঃ …………………………………………………………………………………………………………………………………… …………………………………………………………………………………………………………………………………… |
আমাদের বিষয় এবং লক্ষ্য দল তো নির্ধারণ হয়ে গেল। এবার নির্ধারণ করা বিষয় ও লক্ষ্য দলের জন্য যে উপহার বানাব তা নির্ধারণ করার পালা। আমরা আমাদের নির্ধারণ করা লক্ষ্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিছু তথ্য সংগ্রহ করে উপহার বানাব। তবে তথ্য সংগ্রহের সময় আমানের মনে রাখতে হবে, যাদের আমরা উপহার দেবো তারা যেন বুঝতে না পারে, তাদের উপহার নেওয়ার জন্য আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। আমরা একটি প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করব। আর এ জন্য আমরা দলের সদস্যরা মিলে কিছু প্রশ্ন দিয়ে একটি প্রশ্নপত্র তৈরি করব। নিচের ঘরে আমাদের তৈরি প্রশ্নগুলো লিখি।। এবার পরের সেশনের আগে এই প্রশ্নমালা ব্যবহার করে ও তথ্য সংগ্রহ করে শ্রেণিতে নিয়ে আসব।
তথ্য সংগ্রহের প্রশ্নমালা |
---|
বিষয়ঃ ______________________________________ নির্ধারণ করা লক্ষ্যঃ ______________________________________ প্রশ্নসমূহঃ ___________________________________ |
১।
|
২।
|
৩।
|
৪।
|
তথ্য সংগ্রহ তো হয়ে গেল। এবার শ্রেণিতে আমাদের দলের সঙ্গে সংগৃহীত তথা নিয়ে আলোচনা করি। ক ধরনের উপকরণ ও কনটেন্ট আমাদের পছন্দ করা ব্যক্তি বা দলকে উপহার দিতে প্রয়োজন তা আমরা দলে আলোচনা করে নিচের সারাংশটি লিখি।
উপহারের ধরন | ………………………………………………………………………………………………………………………………… …………………………………………………………………………………………………………………………………… |
কী ধরনের কনটেন্ট (কথা/লেখা/ছবি) | ………………………………………………………………………………………………………………………………… …………………………………………………………………………………………………………………………………… |
যা দিয়ে উপহার তৈরি করা যাবে | ………………………………………………………………………………………………………………………………… …………………………………………………………………………………………………………………………………… |
উপহার বানানোর জন্য একটি বিষয় এবং কাকে উপহার দেবে তা ঠিক করা এবং সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ও উপকরণ দিয়ে উপহার বানানো খুবই প্রয়োজন। ওপরের কাজটি করার মধ্য দিয়ে আমরা উপহার বানানোর দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলাম। এবার আর একটি কাজ করব। আমরা কি ধারণা করতে পারি এবার কী কাজ করব? আমাদের সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করি এবং ধারনাটি পাশের ছকে লিখি।
ধারণা ………………………………………………………………………………………………………………………………… …………………………………………………………………………………………………………………………………… ………………………………………………………………………………………………………………………………… …………………………………………………………………………………………………………………………………… |
এবার আমরা আমাদের প্রাপ্ত তথ্য থেকে যে ধরণের কনটেন্ট ও উপকরণের ধারণা উপহার বানানোর জন্য পেয়েছি তা সব দলের সামনে উপস্থাপনের পালা। ওপরের যে তিনটি ঘর আমরা পূরণ করলাম, তা দিয়েই আমাদের দলের কাজ উপস্থাপন করতে পারি। একটি পোস্টার কাগজে আমাদের উপস্থাপনের বিষয়গুলো দলগতভাবে লিখি এবং দল থেকে যেকোনো দুজন উপস্থাপন করি। অন্যান্য দলগুলো ও কিন্তু উপস্থাপন করবে। একটি বিষয় আমরা কি খেয়াল করেছি? দলগুলো যে বিষয়ের ওপর উপহার বানাতে চায়, তার নির্ধারিত ব্যক্তি বা লক্ষ্য দল ভিন্ন এবং এই ব্যক্তি বা লক্ষ্য দল অনুযায়ী উপহারের ধরনও ভিন্ন।
পরবর্তী সেশনে কিন্তু আমরা আমাদের সেই উপহারটি বানাব। তাই দলে ঠিক করি কী কী জিনিস আমাদের লাগতে পারে এবং সেগুলো যদি সম্ভব হয়, তাহলে বাড়ি থেকে কিছুটা তৈরি করে না হয় তৈরির উপকরণ শ্রেণিতে নিয়ে আসব এবং উপহারটি বানাব।
এখন উপহার বানানোর সময়া উপহার বানানোর জন্য বিষয় তো আমাদের আগেই নির্ধারণ করা আছে, আমরা কাকে উপহার দিতে চাই তা-ও নির্ধারণ করা আছে, এবার বিভিন্ন মানুষের জন্য তাদের উপযোগী করে উপহার বানাতে হবে। আমাদের উপহার বাক্সের একটি নাম দেওয়া যেতে পারে। যেমন: দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য 'স্মৃতির পাতা', প্রধান শিক্ষকের জন্য ধন্যবাদ বাক্স' ইত্যাদি। আমাদের দেওয়া উপহারের নামটি আমরা পাশের ঘরে লিখি।
উপহার বানানোর সময় আমাদের আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। তা হলো-
উপহার যেন হাতের কাছের জিনিস দিয়ে বানানো যায়।
কোনো ধরনের বাড়তি অর্থ যেন উপহার তৈরিতে ব্যবহার না হয়।
উপহার যেন দেখতে সুন্দর হয়।
উপহারটি বানাতে বেশি সময় যেন না লাগে।
আমরা দলগতভাবে যে সব কনটেন্ট ও উপকরণ উপহার হিসেবে বানালাম তার একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা নিজের ঘরে লিখতে পারি।
কনটেন্ট | উপকরণের ধরণ |
---|---|
|
|
এবার শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে উপহারটি যার বা যাদের জন্য বানিয়েছি, তাদের দিয়ে আসি। উপহার দেওয়ার পর তাদের মতামত আমরা জানতে চাইতে পারি। এভাবে উপহার বানানোর আয়োজন সম্পন্ন হলো।
আমরা আমাদের জীবনে এমন আরও উপহার বানাব এবং থাকে উপহারটি দেব তার পছন্দ উপলক্ষ্য মাথায় রেখে আমরা উপহার বানাব।
এবার এই সেশনের কাজটি আমাদের কাছে কেমন লেগেছে, আমাদের অভিজ্ঞতা ও আমরা কী শিখলাম তা নিচে লিখতে পারি।
আরও দেখুন...